Friday 17 June 2011

"এক বিখ্যাত জীবনের আত্ম -কাহিনী " ( যা আমাকে খুব আনুপ্রানিত করে)

                 "স্টিভ জবসঅ্যাপেল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠাতা"            
 আশাকরি  সকলে সুস্থ থেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন আমি আজ একটা লেখা শেয়ার করবো সবার সাথেএই লেখাটি একটি বক্তব্যের লেখ্যরূপ যে বক্তব্যটি উপস্থাপিত হয়েছিলো বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেবক্তব্যটি বেশ পুরোনোতবে আমার জীবনে শোনা সবচাইতে মুগ্ধকর আর সাহমূলক বক্তব্যতাই সবার সাথে শেয়ার করে নিতে চাইছিএই বক্তব্য দিয়েছিলেন স্টিভ জবসযিনি অ্যাপল এবং পিক্সার অ্যানিমেশন  নামক দুইটি সেরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইওবক্তব্য রেখেছিলেন ২০০৫ সালের ১২ জুনলেখাটির ইংরেজি রূপ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া

 """"বক্তার জীবনের মতন এত রকম কঠিন সময়, কষ্টকর সময় আর বৈচিত্র্য আমাদের সবার জীবনে থাকেনাকিন্তু আমাদের জীবনে থাকে অনেক রকম ঘাত-প্রতিঘাত আর সফলতার আকাঙ্ক্ষাআর তাই সবারই এই লেখাটা পড়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, ভালো লাগবে আর অনুপ্রাণিত হবেন সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি

প্রথমেই একটা সত্য কথা বলে নিই

আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিনিতাই সমাবর্তন জিনিসটাতেও আমার কখনো কোনো দিন উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনিএর চেয়ে বড় সত্য কথা হলো, আজকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছে থেকে দেখছি আমিতাই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছিকোনো কথার ফুলঝুরি নয় আজ, স্রেফ তিনটা গল্প বলব আমি তোমাদেরএর বাইরে কিছু নয়

আমার প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন বিন্দুকে এক সুতায় বেঁধে ফেলার গল্প

ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মাথাতেই রিড কলেজে পড়ালেখায় ক্ষ্যান্ত দিই আমি যদিও এর পরও সেখানে আমি প্রায় দেড় বছর ছিলাম, কিন্তু সেটাকে পড়ালেখা নিয়ে থাকা বলে নাআচ্ছা, কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম?
এর শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগেআমার আসল মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেনআমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে এমন কারও কাছে দত্তক দেবেন, যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছেসিদ্ধান্ত হলো এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেবেনকিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, ওই দম্পতির কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, বিশেষ করে আইনজীবী ভদ্রলোক কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননিআমার মা তো আর কাগজপত্রে সই করতে রাজি হন নাঅনেক ঘটনার পর ওই দম্পতি প্রতিজ্ঞা করলেন, তাঁরা আমাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, তখন মায়ের মন একটু গললোতিনি কাগজে সই করে আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন
এর ১৭ বছর পরের ঘটনাতাঁরা আমাকে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেনকিন্তু আমি বোকার মতো বেছে নিয়েছিলাম এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ালেখার খরচ প্রায় তোমাদের এই স্ট্যানফোর্ডের সমানআমার দরিদ্র মা-বাবার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিলছয় মাসের মাথাতেই আমি বুঝলাম, এর কোনো মানে হয় নাজীবনে কী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম নাঅথচ মা-বাবার সারা জীবনের জমানো সব টাকা এই অর্থহীন পড়ালেখার পেছনে আমি ব্যয় করছিলামতাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনে হলো যে এবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে
সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিলবিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ডিগ্রির জন্য দরকারী কিন্তু আমার অপছন্দের কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না, আমি আমার আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে নিতে লাগলাম
পুরো ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই রোমান্টিক বলা যাবে নাকারণ তখন আমার কোনো রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমোতামব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে খাবার কিনতামপ্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্যএটা আমার খুবই ভালো লাগতএই ভালো লাগাটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ
রিড কলেজে সম্ভবত দেশে সেরা ক্যালিগ্রাফি শেখানো হতো সে সময়ক্যাম্পাসে সাঁটা পোস্টারসহ সবকিছুই করা হতো চমকার হাতের লেখা দিয়েআমি যেহেতু আর স্বাভাবিক পড়ালেখার মাঝে ছিলাম না, তাই যে কোনো কোর্সই চাইলে নিতে পারতাম আমি ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলামসেরিফ ও স্যান সেরিফের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো-বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফি কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখলামব্যাপারটা ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্টআমি এর মধ্যেই মজা খুঁজে পেলাম
এ ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা কোনো দিন বাস্তবজীবনে আমার কাজে আসবেএটা কখনো ভাবিনিকিন্তু ১০ বছর পর আমরা যখন আমাদের প্রথম ম্যাকিনটশ কম্পিউটার (আমরা যাকে ম্যাক বলে চিনি) ডিজাইন করি, তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমার কাজে লাগল ওটাই ছিল প্রথম কম্পিউটার, যেটায় চমকার টাইপোগ্রাফির ব্যবহার ছিলআমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সটা না নিতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো নানা রকম অক্ষর (টাইপফেইস) এবং আনুপাতিক দূরত্বের অক্ষর থাকত নাআর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের এই ফন্ট সরাসরি নকল করেছে, তাই বলা যায়, কোনো কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত নাআমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম, তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকত নাঅবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা অসম্ভব ছিল, কিন্তু ১০ বছর পর পেছনে তাকালে এটা ছিল খুবই পরিষ্কার একটা বিষয়
আবার তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারবে নাএটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভবঅতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবেইতোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবেএটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে

আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প

আমি খুব ভাগ্যবান ছিলামকারণ, জীবনের শুরুতেই আমি যা করতে ভালোবাসি, তা খুঁজে পেয়েছিলাম
আমার বয়স যখন ২০, তখন আমি আর ওজ দুজনে মিলে আমাদের বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কোম্পানি শুরু করেছিলামআমরা পরিশ্রম করেছিলাম ফাটাফাটি, তাই তো দুজনের সেই কোম্পানি ১০ বছরের মাথায় চার হাজার কর্মচারীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়আমার বয়স যখন ৩০, তখন আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিন্টোস বাজারে ছেড়েছিএর ঠিক এক বছর পরের ঘটনাআমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হইযে কোম্পানির মালিক তুমি নিজে, সেই কোম্পানি থেকে কীভাবে তোমার চাকরি চলে যায়? মজার হলেও আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিলপ্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগল, তখন কোম্পানিটি ভালোভাবে চালানোর জন্য এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম, যে আমার সঙ্গে কাজ করবেএক বছর ঠিকঠাকমতো কাটলেও এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার মতের অমিল হতে শুরু করলপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলে আমি অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হলামএবং সেটা ছিল খুব ঢাকঢোল পিটিয়েইতোমরা বুঝতেই পারছ, ঘটনাটা আমার জন্য কেমন হতাশাজনক ছিল আমি সারা জীবন যে জিনিসটার পেছনে খেটেছি, সেটাই আর আমার রইল না
সত্যিই এর পরের কয়েক মাস আমি প্রচন্ড দিশেহারা অবস্থায় ছিলামআমি ডেভিড প্যাকার্ড ও বব নয়েসের সঙ্গে দেখা করে পুরো ব্যাপারটার জন্য ক্ষমা চাইলাম আমাকে তখন সবাই চিনত, তাই এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম নামনে হতো, ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাইকিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছিলাম, সেটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিচাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনিতাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম
প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনাআমি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেলাম, কোনো চাপ নেই, সফল হওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের কৌশল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেইআমি প্রবেশ করলাম আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে
পরবর্তী পাঁচ বছরে নেক্সট ও পিক্সার নামের দুটো কোম্পানি শুরু করি আমি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের, যাকে পরে বিয়ে করিপিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করিআর এখন তো পিক্সারকে সবাই চেনেপৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিওএরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনাঅ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসিআর লরেনের সঙ্গে চলতে থাকে আমার চমত্কার সংসার জীবন
আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না, যদি না অ্যাপল থেকে আমি চাকরিচ্যুত হতাম
এটা আমার জন্য খুব বাজে আর তেতো হলেও দরকারি একটা ওষুধ ছিলকখনো কখনো জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো নাআমি নিশ্চিত, যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছিলাম, সেটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম
তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে, ঠিক যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করোতোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা, এটা একটা অসাধারণ কাজআর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবেযদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকোঅন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয়ো নাতোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবেযেকোনো ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবেসুতরাং খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছঅন্য কোনোখানে নিজেকে স্থায়ী করে ফেলো না

আমার শেষ গল্পটির বিষয় মৃত্যু

আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবেএ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করিআজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন নাহতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে
পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে, এ জিনিসটা মাথায় রাখার ব্যাপারটাই জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেকারণ, প্রায় সবকিছুই যেমন, সব অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা আর ব্যর্থতার গ্লানিমৃত্যুর মুখে হঠা করে সব নেই হয়ে যায়, টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণতোমার কিছু হারানোর আছেআমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবেতুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছতাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে?
প্রায় এক বছর আগের এক সকালে আমার ক্যানসার ধরা পড়েডাক্তারদের ভাষ্যমতে, এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই আমারপ্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য এই ক্যানসারের কারণে তাঁরা আমার আয়ু বেঁধে দিলেন তিন থেকে ছয় মাসউপদেশ দিলেন বাসায় ফিরে যেতেযেটার সোজাসাপটা মানে দাঁড়ায়, বাসায় গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওএমনভাবে জিনিসটাকে ম্যানেজ করো, যাতে পরিবারের সবার জন্য বিষয়টা যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়
সারা দিন পর সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলোতাঁরা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিয়ে পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে টিউমার থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে এলেনআমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন, তাই কিছুই দেখিনিকিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল, চিকিসকেরা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, তখন তাঁরা কাঁদতে শুরু করেছিলেনকারণ, আমার ক্যানসার এখন যে অবস্থায় আছে, তা সার্জারির মাধ্যমে চিকিসা সম্ভবআমার সেই সার্জারি হয়েছিল এবং দেখতেই পাচ্ছ, এখন আমি সুস্থ
কেউই মরতে চায় নাএমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরতে চায় নাকিন্তু মৃত্যুই আমাদের গন্তব্যএখনো পর্যন্ত কেউ এটা থেকে বাঁচতে পারেনিএমনই তো হওয়ার কথাকারণ, মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম প্রধান আবিষ্কারএটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্টমৃত্যু পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে এসেছে নতুন শিশুর জন্য জায়গা করে দেয়এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, কিন্তু খুব বেশি দিন দূরে নয়, যেদিন তোমরা পুরোনো হয়ে যাবে এবং তোমাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হবেআমার অতি নাটুকেপনার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই আসল সত্য
তোমাদের সময় সীমিতকাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থা অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট করো না
যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছেতোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো নাআর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন আর ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবেওরা যেভাবেই হোক, এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে, তুমি আসলে কী হতে চাওএ ছাড়া আর যা বাকি থাকে, সবই খুব গৌণ ব্যাপার
আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামের অসাধারণ একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো; যেটা কিনা ছিল আমাদের প্রজন্মের বাইবেলএটা বের করতেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ভদ্রলোকতিনি তাঁর কবিত্ব দিয়ে পত্রিকাটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন
স্টুয়ার্ট ও তাঁর টিম পত্রিকাটির অনেক সংখ্যা বের করেছিলসত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স যখন ঠিক তোমাদের বয়সের কাছাকাছি, তখন পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়বিদায়ী সেই সংখ্যার শেষ পাতায় ছিল একটা ভোরের ছবি তার নিচে লেখা ছিলক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো এটা ছিল তাদের বিদায়কালের বার্তা– “ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো
আমি নিজেও সব সময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছিআজ তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আরও বড়, নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরও এটা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি
Stay Hungry. Stay Foolish.
ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো
তোমাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।""""
 

No comments:

Post a Comment