সংক্ষিপ্ত পরিচয়
AK-47 হল একটি গ্যাস অপারেটেড স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র । ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবিষ্কৃত হয় এবং তখন থেকে অদ্যাবধি পরযন্ত এটি বহুল জনপ্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হিসাবে বিশ্বের প্রায় ৫০ টিরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এটি ব্যাবহৃত হচ্ছে। AK-47 এর ডিজাইন করেন সোভিয়েত ট্যাংক কমান্ডার মিখিলি কালাশনিকভ। একে ৪৭ এই একমাত্র অস্ত্র যার থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাইফেলের সংস্করন বের হয়েছে।
"রাইফেল সিরিজের Avtomat Kalashnikova বা AK-47"
প্রস্তুতকারি দেশ :সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া)
আবিষ্কারক :মিখাইল কালাশানিকভ
ডিজাইনের বছর :১৯৪৪-৬৭ (সম্পন্ন হয় ১৯৪৭ সালে)
কার্টিজ :৭.৬২*৩৯ মিমি
রেট অফ ফায়ার :৬০০রাউন্ড/মিনিট
কার্যকর দুরত্ব/রেঞ্জ :৩০০মি
ওজন :৪.৩ কেজি
দৈর্ঘ্য :৮৭০ মিমি
ম্যাগাজিন : ৩০বা ৪৫ রাউন্ডের বক্স ম্যাগাজিন অথবা ৭৫ বা ১০০ রাউন্ডের ড্রাম ম্যগাজিন
কাযপ্রণালী-
প্রথমেই বলেছি একে-৪৭ একটি গ্যাস অপারেটেড স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। চাপাবাজি না মেরে সোজা ভাষায় বলছি আমি কখনো একে-৪৭ নিজে চালাইনি। কিন্তু তাই বলে এ নিয়ে কিছু বলবো না!!! তা হয় নাকি....
ফায়ার করার জন্য প্রথমে একটি ফুলি লোডেড কার্টিজ অথবা বক্স ম্যাগজিন আপনাকে লোড করতে হবে। দুইভাবে একে-৪৭ দিয়ে ফায়ার করা যায়। একটা হল সেফটি ফায়ার (সেমি-অটোমেটিক) অন্যটি ফুল অটোমেটিক। ম্যাগজিন লোড করার পর এর সিলেক্টর টাকে লেভেল অফে নিয়ে গিয়ে আবার ছেড়ে দিতে হবে। এখন এটি চার্জিং (সেমি-অটোমেটিক) মোডে ফায়ারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ট্রিগার টানলে যতক্ষণ না ট্রিগার ছেড়ে দেয়া হবে বা ম্যাগজিন শেষ হয়ে যাবে ততক্ষণ ফায়ারিং হতে থাকবে। এরপর দ্বিতীয় বার ফায়ার করার জন্য আবার আগের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
The gas-operated mechanism of an AK-47 (Chinese version)
এবার আসি ফুল অটোমেটিক মোডে। ম্যাগজিন লোড করার পর এর সিলেক্টর টাকে লেভেল অফে নিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে না দিয়ে মাঝামাঝি স্থানে রাখতে হবে । এখন ফুল অটোমেটিক) মোডে ফায়ারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ট্রিগার টানলে ফায়ার হবে এবঙ দ্বিতীয় বার ফায়ারের জন্য ট্রিগার টানার কোন প্রয়োজন নেই।
একটু আলাদাভাবে
একে ৪৭ এর অন্যতম বৈশিষ্ট হল এর বুলেট এর মারাত্বক ভেদন ক্ষমতা ,এটি ৭.৬২*৩৯ মি.মি বুলেটকে ৭১৫ মিটার/সেকেন্ডে ছুড়ে যা ৮ ইন্চি ওক কাঠের এবং ৫ ইন্চি কনন্ক্রিট দেয়াল ভেদ করতে পারে। এছাড়া এতে কষ্টমাইজ বুলেট ব্যবহার করা যায় যা আরও মারাত্বক হতে পারে। উদাহরনে ভারতের মুম্বাই হামলার সময় মুম্বাই পুলিসের এন্টি টেররিষ্ট স্কোয়াডের চীফ হেমন্ত কারেকারের উদাহরণ দেয়া যায়। যার বডি আর্মার ভেদ করেছিল একে ৪৭ এর কাষ্টমাইজ বুলেট। এছাড়া এতে সিঙ্গেল শট, ব্রাস্ট অব ফায়ার এবং গ্রেনেড ছুড়ার সুবিধা আছে।
"গ্রেনেড লাঞ্চার যুক্ত একে ৪৭"
এসল্ট রাইফেল এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারন এর লক্ষভেদ নয় বরং অন্য কিছু বৈশিষ্ট। কারণ এটি জলে ভিজিয়ে, ধুলাতে রেখে বা এর উপর দিয়ে রাস্তা মেরামতের রোলার চালানোর পরও এটিকে আগের মতই ব্যাবহার করা যায়,যা এর সমপর্যায়ের অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে অসম্ভব। লক্ষভেদে এর থেকে ভাল অনেক রাইফেল আছে। কিন্তু AK সিরিজের রাইফেলের রিলায়েবলিটি অত্যন্ত বেশি। এটা জ্যাম হয় না, ওভারহিটেড হয় না, পানিতে ভিজলে, স্যাতস্যাতে আবহাওয়ায় বা ধুলাবালিতে কিছু হয় না, অতি গরম বা অতি শীতল আবহাওয়াও ভালভাবে কাজ করে। বছরের পর বছর কোন যত্ন না নিলেও কাজ করে। এর জনপ্রিয়তার আরও কারন হচ্ছে এর সহজ ব্যবহার। এটা ব্যবহার করতে M16/G3 এর মত বিশেষ ট্রেনিং এর দরকার হয় না। যে কোন সাধারণ ব্যক্তি ২-৩ ঘন্টা প্রশিক্ষণ নিয়ে এটা ভালভাবেই রপ্ত করার ইতিহাস রয়েছে। এছাড়া এটি রক্ষনাবেক্ষনে তেমন ঝামেলা নেই।
"1955 AK-47 Type 3 "
Avtomat Kalashnikova এভটোমাট কালাশনিকভ’সংক্ষেপে ‘একে’ ইংরেজীতে রুশ এভটোমাট শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘অটোমেটিক’ বা স্বয়ংক্রিয়। এভটোমাট শব্দের আদ্যাক্ষর ‘এ’ এবং কালাশনিকভের আদ্যাক্ষর ‘কে’ মিলিয়ে এ অস্ত্রের নাম দাঁড়ায় ‘একে’ ১৯৪৭ সালে এ রাইফেলের ডিজাইন সম্পন্ন হয় বলে ‘একে’-এর সঙ্গে ‘৪৭’ যোগ করা হয়। এভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল পরিচিত রাইফেলের নামকরণ করা হয় ‘একে-৪৭’। এবার আসি আবিস্কারকের ইতিহাসে--
আবিস্কারকের পরিচয় এবং আবিস্কারের ইতিহাস-
কালাশনিকভের পূর্ণ নাম মিখাইল তিমোফিয়েভিচ কালাশনিকভ। তিনি সাবেক সোভিয়েট সেনাবাহিনীর একজন লে. জেনারেল। ১৯১৯ সালের ১০ নভেম্বর সাইবেরিয়ার আলতাই অঞ্চলে কুরিয়া নামে একটি গ্রামে কৃষক পরিবারে তার জন্ম। তিমোফেল ও আলেকসান্দ্রা কালাশনিকভ দম্পতির তিনি সপ্তদশ সন্তান। ১৯৩৮ সালে তিনি সোভিয়েট রেড আর্মিতে যোগদান করেন। ২৪তম ট্যাংক রেজিমেন্টের সিনিয়র ট্যাংক কমান্ডার হিসাবে পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৪১ সালের অক্টোবরে ব্রায়ানস্কে তিনি জার্মান বাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত হওয়ায় তিনি ৬ মাস ছুটিতে ছিলেন। জার্মানদের হাতে উন্নততর অস্ত্র থাকায় রাতে তার সুনিদ্্রা হতো না। ছুটিতে থাকাকালে একটি নয়া কারবাইন তৈরির ধারণা তার মাথায় আসে। নিজের ধারণাকে কাজে লাগাতে তিনি মাতাই অস্ত্র কারখানায় যান। কর্তৃপক্ষ তাকে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তিনি আমেরিকান এম-১ এবং জার্মান এসআইজি-৪৪ এর ডিজাইনের সর্বোত্তম কৌশলের সমন্বয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৪ সালে তিনি একটি কারবাইনের ডিজাইন তৈরি করেন।
"যৌবনে ইজভেস্ক অস্ত্র কারখানায় ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত মিখাইল কালাশনিকভ"
কিন্তু তার ডিজাইন কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। তবে ব্যর্থ হলেও তিনি দমে যাননি। ১৯৪৬ সালে তার উদ্ভাবিত একে-৪৭ রাইফেলের পূর্ববর্তী সংস্করণ ‘একে-৪৬’ সরকারিভাবে সামরিক বাহিনীতে পরীক্ষা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রেড আর্মির কয়েকটি নির্দিষ্ট ইউনিটে তার রাইফেল গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে প্রতি মিনিটে ৬ শ’ গুলিবর্ষণে সক্ষম তার উদ্ভাবিত রাইফেল সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে পূর্ণমাত্রায় চালু করা হয়। দুই বছরের মধ্যে একে-৪৭ সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সে সময় থেকে এ রাইফেল সোভিয়েট ইউনিয়নের একটি অন্যতম রপ্তানি সামগ্রীতে পরিণত হয়। একে-৪৭ রাইফেল অত্যন্ত কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হওয়ায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এম-১৬ রাইফেল ফেলে দিয়ে এ অস্ত্র গ্রহণ করে। এ পর্যন্ত এক কোটির বেশি একে-৪৭ রাইফেল নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০টির বেশি দেশ এবং অসংখ্য গেরিলা গ্রুপ এ অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে সাবেক ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশগুলোতে পাইরেসি হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষতি হয় ২ শ’ কোটি ডলার। আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও সোভিয়েট যুগে একে-৪৭ রাইফেলের প্যাটেন্ট সংরক্ষণ না করায় কালাশনিকভ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ১৯৯১ সালে স্বত্ব সংরক্ষণ করার আইনি লড়াইয়ে তিনি হেরে যান। ১৯৪৯ সাল থেকে তিনি উদমার্টিয়ার ইজভেস্কে বসবাস করছেন। ৭ দশমিক ৬২ এমএম ক্যালিবারের এ রাইফেল উদ্ভাবনের জন্য তিনি স্টালিন মেডেল লাভ করেন।
Mikhail Kalashnikov - 10.11.2009
তথ্য সুত্রঃ wiki.
No comments:
Post a Comment